ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন যাত্রা!

টেকনাফ প্রতিনিধি :
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে যাচ্ছেন পর্যটকরা। জাহাজে ধারণ ক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী উঠানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইফ জ্যাকেট রাখেন না মালিকরা। প্রতিনিয়ত টিকেট প্রতারণা এবং সিট বিড়ম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরা। তবুও দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্বপ্নের সেন্টমার্টিনে যাচ্ছেন তাঁরা। আগন্তুক পর্যটকদের প্রলোভনে ফেলে অনেকটা বাধ্য করছে জাহাজ পরিচালকরা। অভিযোগ উঠেছে, সেন্টমার্টিন নৌ-পথে চলাচলকারী জাহাজ কর্তৃপক্ষ কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। যে কোন মুহুর্তে আবার বড় ধরণের দুঘর্টনার আশংকাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, সেন্টমার্টিন নৌ-পথে দমদমিয়া জাহাজঘাট দিয়ে পর্যটকবাহী কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন, এলসিটি কুতুবদিয়া, এলসিটি কাজল, বে ক্রুজ, গ্রীণ লাইন, এমভি বাঙ্গালীসহ ৭টি জাহাজ এবং টেকনাফ ষ্টেশন থেকে কয়েকটি ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী ও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। অধিকাংশ জাহাজ এবং ট্রলার ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ ইচ্ছমত যাত্রী উঠিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে থাকে। পর্যটকরা জানায়, সেন্টমার্টিন নৌ-পথে চলাচলাকারী জাহাজ এবং ট্রলার দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছেন। তারা সিটের চেয়ে দাঁড়িয়ে আরো বেশী সংখ্যক
পর্যটক উঠিয়েই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। সিটের কথা বলে জাহাজে উঠিয়ে সিট না পেয়ে পর্যটক এবং ক্রু‘র মধ্যে প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা লেগে যায়। আশংকা করা হচ্ছে, দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার নৌ-পথে পর্যটকরা যে কোন সময়ে দুঘর্টনায় পড়তে পারেন। এদিকে প্রতিটি জাহাজের নিজস্ব জেটি না থাকায় পর্যটকরা রীতিমত ভোগান্তিতে পড়ছেন। জাহাজঘাটের ঝুঁকিপূর্ণ লক্কর ঝক্কর জেটি যাওয়ার পথেই যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে। নি¤œমানের কাঠ দিয়ে বেশ আগেই নির্মাণ করা এসব জেটিতে হাটাও মুশকিল। দ্বীপে সব জাহাজের যাত্রী নামানোর জন্য কেবলমাত্র একটি জেটি রয়েছে। একের পর এক জাহাজ ভীড়ে যাত্রীদের কাংখিত দ্বীপে নামিয়ে দিতেই দীর্ঘক্ষণ সময় লেগে যায়। জেটি সংকটে জাহাজে উঠতে নামতে আগন্তুক পর্যটকরা প্রবালদ্বীপে বেড়ানোর সময়ও পাননা। এদিকে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে জাহাজের ভারসাম্য অনেক সময় ঠিক থাকেনা।
সেন্টমার্টিনে বেড়াতে আসা কুষ্টিয়া এলাকার আব্দুল করিম, ঢাকা শনির আখড়া থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক শেখ মোহাম্মদ, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বেড়াতে আসা রেখা ও কলেজ ছাত্রী ঝর্ণা জানান, সিট বিড়ম্বনা এবং পদে পদে হয়রাণীর শিকার হলাম আমরা।
কেয়ারী সিন্দাবাদের ম্যানেজার শাহ আলম, নিয়মনীতি মেনে সেন্ট মার্টিন নৌ পথে জাহাজ পরিচালনা এবং ধারণ ক্ষমতার বাইরে জাহাজে যাত্রী তুলেননা বলে জানান। এমভি বাঙ্গালীর টেকনাফস্থ ম্যানেজার মো: মনিরুল ইসলাম অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না দাবী করে বলেন সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় লোকজন এবং ষ্টাফের কারণেই অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হচ্ছে তেমনটি মনে হয়। নতুন এবং বিলাসবহুল এই জাহাজে পর্যটকদের আগ্রহ একটু বিষয় হওয়ায় সামন্য সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। অতিরিক্ত পর্যটক নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে জানিয়ে টেকনাফস্থ টুরিষ্ট পুলিশের ওসি মো: জাকির হোসাইন মল্লিক বলেন, জাহাজগুলো আসলে একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত। জনবল সংকটের কারণে তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না দাবী করে তিনি আরো বলেন পর্যটকদের সুবিধার্থে আমরা সদা কাজ করে যাচ্ছি। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোর অপরাধে জাহাজ এমভি কাজলকে জরিমানা করা হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম বলেন, ধারণ ক্ষমতার বাইরে যাত্রী না উঠাতে জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। পর্যটন ব্যবসার নামে যারা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী উঠাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: